
গফুর মিয়া চৌধুরী, উখিয়া:
উখিয়ায় খাদ্য গুদামে চাল সংগ্রহের নামে লুটপাট ও দূর্নীতির মহোৎসব চলছে। প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার চাল সংগ্রহে লোপাট চললেও দেখার কেউ নেই। এসব অনিয়ম দূনীতি করে ও সরকারের রাষ্ট্রীয় কোষাগারের লক্ষ লক্ষ টাকা আতœসাতের বিষয়ে দ্রুত তদন্তের দাবী করেছেন সচেতন মহল। এ নি¤œ মানের ও কম দামের চাল সংগ্রহ করে প্রথম কিস্তিতে প্রায় সাড়ে ৫লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে খাদ্য উখিয়া খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা। ব্যাপক অনিয়ম ও দূনীতির তদন্ত করলে নি¤œ মানের চাল খাদ্য গুদামে সনাক্তকরা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় সুশীল সমাজ। ইতি পূর্বেও ২০১৩ সালে চাল সংগ্রহে অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় খাদ্য অধিদপ্তর উখিয়ার ৬জন রাইচ মিলের মালিকদেরকে কালো তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করে ছিল বলে দায়িত্ব শীল সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
জেলা খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে খাদ্য অধিদপ্তর সারা দেশে অভ্যন্তরীন বোরো চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু করে। বাজার দাম স্থিতিশীল ও কৃষকদের ন্যার্য্য মূল্য নিশ্চিত এবং আপতকালীন খাদ্য সংকট মোকাবেলা করার লক্ষ্যে মূলত চাল সংগ্রহ কর্মসূচী চালু করা হয়। প্রতি কেজি চাল ৩১ টাকা দরে সরকার মিলারদের কাছ থেকে এ চাল ক্রয় করে যাচ্ছে।
সূত্রে মতে, উখিয়ায় এবারে ১হাজার ৬শত ২৮ মেট্রিকটন চাল সংগ্রহ করার লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। ৬জন রাইচ মিল মালিক বা মিলার গণ উক্ত চাল সরবারাহ করার জন্য চুক্তি বদ্ধ হয়েছেন। চলতি আগষ্ট মাসে শুরু হওয়া প্রথম পর্যায়ে ৮শত ১৪ মেট্রিকটন চাল ইতিমধ্যে খাদ্য গুদামে সরবরাহ করা হয়েছে। অবশিষ্ট চাল দ্বিতীয় পর্যায়ে সংগ্রহের কাজ চলছে।
গুরতর অভিযোগ উঠেছে, উখিয়া খাদ্য পরিদর্শক ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) সুনিল দত্তের সাথে মিলার গণ গোপন আতাঁতের মাধ্যমে নি¤œ মানের ও কম দামের চাল সংগ্রহ করে দিচ্ছে। প্রতি কেজি ৫ টাকা হারে উৎকোচ গ্রহন করছে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা সুনিল দত্ত। এবারে প্রায় ৫ কোটি ৩৪ লক্ষ টাকার চাল সংগ্রহের নামে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা সাড়ে ৫ লক্ষ টাকা উৎকোচ বানিজ্যে করেছে। বিশাল অংকের এই উৎকোচ বানিজ্যে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য অধিদপ্তরসহ উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট ভাগ বাটোয়ারা অনুযায়ী বন্ঠন করা হয় বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে উখিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, চাল সংগ্রহের নামে কোন প্রকার অনিয়ম দূনীতি হয়ে থাকলে তা খোঁজ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলবেন বলে জানান এ প্রতিবেদককে।
অনেকেই অভিযোগ করে জানিয়েছেন, চুক্তি বদ্ধ মিলার নয় এমন ব্যক্তি ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে নি¤œ মানের চাল খাদ্য গুদামে সরবরাহ করছে। বিতর্কিত আব্দুর রহিম নামক ওই ব্যক্তি খাদ্য গুদামে জোর পূর্বক চাল প্রদানকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী সদস্য আবুল মনছুর চৌধুরী বলেন, খাদ্য মন্ত্রনালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করে মিলারগণ ধান চালে রূপান্তর করে খাদ্য গুদামে সরবরাহ করার কথা থাকলেও এক মুঠো বা এক কজি ধান বা চাল কৃষকের কাছ থেকে ক্রয় করেনি। বর্তমান সরকার যে মহৎ উদ্দেশ্যে চাল সংগ্রহ অভিযান কর্মসূচী হাতে নিয়েছিল খাদ্য বিভাগের কতিপয় দুনীতিবাজ কর্মকর্তার কারনে তা ভেস্তে যেতে বসেছে। মিলার গণ উত্তরবঙ্গ হতে নি¤œ ও কম দামের চাল ক্রয় করে তা আবার খাদ্য গুদামে সরবরাহ করায় এখানকার প্রান্তিক চাষীরা তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
এব্যাপারে জানতে চাইলে, কক্সবাজার খাদ্য অধিদপ্তরের খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ তানভীর হোসেন বলেন, খাদ্য মন্ত্রনালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী ১৪% ভাগ আর্দ্রতা এবং গুনগত মান সম্পন্ন চাল সরবারাহ করার বিধান রয়েছে। কোন অবস্থাতে নি¤œ মানের ও কমদামের চাল খাদ্য গুদামে মজুদ রাখার কোন সুযোগ নেই।
সচেতন মহলের অভিযোগ, উখিয়ায় চাল সংগ্রহের নামে নি¤œ মানের চাল দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার ভাগ বাটোয়ারা করে আসছে। এদিকে লুটপাট ও ভাগ বাটোয়ারার কথা অস্বীকার করে উখিয়া খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) সুনীল দত্ত বলেন, উখিয়ায় চাল সংগ্রহে চাহিদা বেশী হওয়ায় কষ্টে আছি। উখিয়ায় চাকুরী করার পরিবেশ নেই, আমাকে অন্যত্রে বদলী করার জন্য একটু বেশি করে লিখেন।
পাঠকের মতামত